দেশি মুরগীর বাচ্চা ব্রুডিং ও লালন -পালন পদ্ধতি

 

বাচ্চা বড় করার জায়গা বা ঘরটা এমন হওয়া দরকার যেন সেখানে 3/4 সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চা তার দরকারি জিনিস পর্যাপ্ত পরিমাণে পায়। এখানে বাচ্চার প্রাথমিক দরকার তাপ। ইংরেজীতে জায়গাটা বা ঘরটাকে বলা হয় ব্রডিং ইউনিট(brooding unit)। বাচ্চারা যখন বেশ বড় হয়ে যাবে । তারপর সেগুলোকে শেডে রেখে লালন-পালন করতে হবে। একই সাথে-

নিম্নের ছকে উল্লিখিত ঔষধ/ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে হবে।

টিকার নাম টিকার রং মিশ্রণ পদ্ধতি
টিকা প্রদানের বয়স ও দেয়ার পদ্ধতি
মারেক্স প্রতি ভায়ালে টিকার মাত্রা 1000 সিসি
1 দিন বয়সে চামড়ার নীচে 0.2 সিসি
বিসিআরডিভি
সবুজ (রাণীক্ষেত)
এক শিশি টিকা ১০০ ফোটা পরিশোধিত পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে
২১ দিনে ১ চোখে ১ ফোটা
গামবোরো (ডি-৭৮)সাদা টিকার সাথে প্রাপ্ত পরিশোধিত পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে
২৮ দিনে ১ চোখে ১ ফোটা
ফাউল পক্স
খয়েরী বা ইটের রং
৩ মিলি পরিশোধিত পানিতে মেশাতে হবে
৩০ দিনে ডানার চামড়ায় খুঁচিয়ে
আরডিভি
সাদা (রাণীক্ষেত)
১০০ মিলি পরিশোধিত পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে
৬০ দিনে; পুনরায় ৬ মাস পর পর রানের মাংসে ১ মিলি করে ইনজেকশন
ফাউল কলেরা
সাদা তরল
তরল অবস্থায় পাওয়া যায়
৭৫ দিনে ও ৯০ দিনে; পুনরায় ৬ মাস পর পর বুকের চামড়ার নিচে ১ মিলি করে ইনজেকশন
ডাক প্লেগ তরল অবস্থায় পাওয়া যায়
বুকের মাংসে 1 সিসি। 21 হতে 30 দিন বয়সে 6 মাস অন্তর।

 

শাবক ঘরে বাচ্চা মুরগির পরিচর্যা

(১) বাচ্চা ঘরে ঠিকমতো তাপ দিতে হবে যেটা ওপরে বলা হয়েছে। যদি স্টোভে গরম করার ব্যবস্থা থাকে তবে দেখতে হবে স্টোভে বা ল্যাম্পে কোন গন্ডগোল আছে কিনা। কোন কারনেই যেন বাচ্চারা উত্তপ্ত আলোর কাছে না পৌছাতে পারে-সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

(২) ঘরে অবশ্যই স্যাতসেতে ভাব যেন না থাকে। এটা এড়ানো যাবে বাচ্চা ঘরে পুরুস্তরের বিছানা(Deep litter) বিছিয়ে।

(৩) বাচ্চারা যেন বিছানার বিচুলি (খড়) খাবার অভ্যাস না করে। বাচ্চাদের খাবার দিতে হবে বাচ্চারা ১ দিনের হলে শক্ত পিচবোর্ডের ওপর। কিছুটা বড় মুরগিদের জন্য খাবারের জায়গা (Chick hoppers)সবসময় যেন খাবারে ভর্তি থাকে। পরীক্ষিত এবং শাবকদের সুষম খাবার দিতে হবে।

(৪) টাটকা বাতাস আসবার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

(৫) বাচ্চাদের বয়স ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ হলে ওদের দাড়ে বসানো অভ্যাস করতে হবে। বাচ্চাদের খুব তাড়াতাড়ি দাড়ে বসা অভ্যাস করালে মেঝেতে ভিড় কমবে। সেই সাথে বিছানা থেকে তৈরি রোগ ব্যাধির হাত থেকেও মুক্ত থাকবে ওরা।

(৬) বাচ্চাদের সামনে পরিষ্কার মোটামুটি ঠান্ডা পানি দিনে অন্তত দুই বার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৭) বাচ্চা তিন সপ্তাহের বেশি বয়স হয়ে গেলে ওদের কুচানে ঘাস দেবার ব্যবস্থা করুন।

(৮) প্রতিদিন বাচ্চা ঘর খাবার এবং পানির পাত্র সহ পরিষ্কার করতে হবে।

(৯) নিয়মিত বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় টিকা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।

(১০) সবসময় বাচ্চ ঘর যেন বাচ্চাদের ভীড়ে ভরাট না থাকে। বীড় হলে বাচ্চা বাড়বে কম এবং মারাত্নক ব্যাধির সম্ভাবনা বাড়বে।

(১১) বাচ্চা ঘর এমন জায়গায় করতে হবে যেন ঠান্ডা বাসাত এবং বৃষ্টি বাচ্চাদের ব্যতিব্যস্ত করে না তোলো।

(১২) প্রতিদিন বাচ্চাদের পরিদর্শন করুন। দিনে যতবার বেশি পারেন তত ভাল। লক্ষ্য করতে হবে কোন অস্বভাবিকতা নজরে পড়ে কিনা। সবসময়ে পশু চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।

(১৩) বাচ্চাদের শাবক ঘরে আনবার আগে একবার ঘরের আসবাব, তাপমান যন্ত্র, পানি এবং খাবারের জায়গাগুলি ভালভাবে পরীক্ষা করে নিতে হবে। কোন অসামঞ্জস্য বা ক্রুটি থাকলে সেটা অবশ্যই ঠিক করে নিতে হবে।

একদিনের মুরগির বাচ্চাকে ২ ভাবে বড় করা যায়, যেমন-

(১) স্বাভাবিক ভাবে

(২) কৃত্রিম ভাবে।

বাচ্চা পালনে বিস্তৃত পরিসরে যাবার আগে এটা জানা দরকার যে কৃত্রিমভাবে ডিম ফুটিয়ে যেসব বাচ্চা উৎপাদন করা /তৈরি করা হয়, তাদের কৃত্রিমভাবে বড় করা উচিত।

দেহের মাপ অনুসারে একটি বেশি মুরগি অনায়াসে ১৫ থেকে ২০ টি বাচ্চা বড় করতে পারে। বাচ্চাদের দেহে যতটা গরম দরকার পালিকা মা মুরগি সেটা দিতে পারবে। পালিকা মাকে বাচ্চাদের কাছে ছাড়বার আগে অবশ্য পালিকার স্বাস্থ্য, বিশেষ করে তার দেহে উকুন আছে কিনা দেখে নিতে হবে।

প্রথমে খাবার দিতে হবে সমতল কোনো পাত্রে।

প্রথম সপ্তাহে বাচ্চা প্রতি অল্প পরিমাণ খাবার বারে বারে দিতে হবে। দুই ঘন্টা অন্তর হলে ভালো হয়। খাবার থাকবে বাচ্চা মুরগির সুষম খাদ্য যেটা পানিতে বা দুধে মিশিয়ে কাদা কাদা করে নিতে হবে।

পালিকা মুরগিকে দিতে হবে ভেজা অথবা শুকনো সুষম মুরগি খাদ্য। যে সুষম খাদ্যের মুরগিটির বাড় এনে দেবে। মুরগির খাবার এমনভাবে দিতে হবে যাতে বাচ্চা মুরগি সেখানে মুখ দিতে না পারে। বাচ্চা এবং ধাত্রী মায়ের জন্য প্রচুর পরিষ্কার ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

অন্যান্য পরিচর্যাঃ

খাঁচা বা বাচ্চাদের আশ্রয় স্থান রীতিমত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং কীটনাশক ওষুধ দিয়ে উকুন, মাইট এবং টিক প্রভূতি রক্তচোষা পরজীবী কীটদের ধ্বংস করতে হবে। বাচ্চা যেখানে চরে বেড়াবে সে জায়গাটা জাল দিয়ে ঘেরা থাকবে। চরে বেড়াবার জায়গাটা যেন ইদুর বেড়ালে নষ্ট করে না দেয়।

অতিরিক্ত পরিচর্যা:

সপ্তাহে একবার বা দুইবার পালিকা মা এবং বাচ্চাদের সুর্যস্নান করানো ভালো।

কৃত্রিমভাবে মুরগির বাচ্চা বড় করা:

কৃত্রিমভাবে যথন বড় করার চিন্তা করবেন। তখন পালিকা মায়েরদরকার পড়বে না। এখানে বাচ্চাদের বড় করা হয় স্রেফ কৃত্রিমভাবে বাচ্চাদের তাপ জুগিয়ে। স্বাভাবিকভাবে মুরগির বাচ্চা বড় করার চেয়ে কৃত্রিম ভাবে বড় করার কতোগুলি সুবিধে আছে তা হলো:

(১) ঋতুর যে কোন সময়ে বাচ্চা বড় করা যায়,

(২) হাজারের ওপর বাচ্চা মাত্র একজনমানুষ বড় করতে পারে।

(৩) বাচ্চা বড় করার স্বাস্থ্য বিধানগুলি এই ব্যবস্থায় সহজেই জানা যায়,

(৪) বাচ্চার পক্ষে উপযুক্ত তাপের নিয়ন্ত্রণ সুষ্ঠুভাবে পালন করা যেতে পারে,

(৫) বাচ্চাদের খাওয়ানোর ব্যাপারটা পরিকল্পনা মোতাবেক করা যেতে পারে।

বাজারে বাচ্চাদের বড় করার শাবক ঘর(Proodes House) নানা মাপোর আর ধাপের পাওয়া যায়। এবং তাপ দেবার ব্যবস্থাও বিভিন্ন। মাপ, নির্দেশনাবলী, মুরগির সংখ্যা এবং দাম নানা ধরনের হয়।

একটি আদর্শ শাবক ঘরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি হবে, তাপ নিয়ন্ত্রিত, নিয়মিত পরিশুদ্ধ বাতাস যোগানো, শুকনো ভাব, দরকার মতো আলো, বিচরণের খোলা জায়গা, বীজানুমুক্ত করার সহজ উপায়, বাচ্চাদের শুক্রদের থেকে রক্ষা, আগুন থেকে বাচানো, এবং সস্তায় নির্মাণ খরচ ইত্যাদি।

বাচ্চা ঘর গরম করার নানা ব্যবস্থা থাকতে পারে, কয়লা, কেরোসিন তেল, গ্যাস, বিদু্ৎ অর্থাৎ যে কোন জিনিসি যেটা স্থানীয় জায়গায় পাওয়া যাবে এবং মুরগি পালকের ধরা ছোয়ার মধ্যে হবে। তাপ নিয়ন্ত্রণের কথা যদি তোলা হয় তবে বিদু্ৎ হচ্ছে সবচেয়ে ভালো।

আবদ্ধ পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করলে নিয়মিত ভাবে মুরগিকে বেশ কিছু ভিটামিন দিতে হবে। এতে দেশি মুরগির ডিম উৎপাদন ভালো থাকবে।

ঔষধের নাম সাপ্তাহিক প্রয়োগমাত্রা

এডি৩ই সপ্তাহে দুইদিন সকালের পানিতে ২ লিটার পানিতে ১ মিলি।
লিভার টনিক সপ্তাহে একদিন সকালের পানিতে ৩ লিটার পানিতে ১ মিলি।
ই-সেল এক সপ্তাহ অন্তর পরপর দুইদিন ২ লিটার পানিতে ১ মিলি।
জিংক সপ্তাহে একদিন সকালের পানিতে ১ লিটার পানিতে ১ মিলি।
ক্যালসিয়াম সপ্তাহে একদিন বিকেলের পানিতে ১ লিটার পানিতে ১ মিলি।

-0-

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *